আমাদের অর্জন না বিসর্জন
ভারত সফরের মধ্যদিয়ে প্রধানমন্ত্রী উদার হাতে সকল কিছু দিয়ে এসেছেন। ভারতের জন্য সবগুলো জানালা খুলে দিয়েছেন। ভারত যা চায়নি, তাও উজাড় করে দিয়ে এসেছেন। এখন আর দেয়ার কিছু বাকী নেই। এতে আমাদের অর্জন হয়েছে না কি, বিসর্জন তা বুঝতে বেশী জ্ঞানের প্রয়োজন হবে না।টিপাইমুখে বাঁধ হলে এর প্রাথমিক ধাক্কা লাগবে সিলেটে। গোটা দেশেই এর প্রভাব পড়বে। বাঁধের প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে একজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, এর ফলে আণবিক বোমার চেয়েও বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশে। বৃহত্তর সিলেটবাসী ঐক্যবদ্ধভাবে এর প্রতিবাদ জানিয়েছে। এ কারণেই আন্তর্জাতিক মহলেও কথা উঠেছে।
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের বলেছেন, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, টিপাইমুখ বাঁধের দ্বারা বাংলদেশের ক্ষতি হয় এমন কিছু তারা করবে না। একথা বিশ্বাস করি কী করে? তার মরহুম পিতার সময়ে ইন্দিরা গান্ধীর সাথে চুক্তি হয়েছিল। এর কারণে ক্ষতি হয়েছে কিনা তা তার স্মরণ থাকার কথা। ফারাক্কা বাঁধের কারণে সেচ বন্ধ হয়ে ৩ লাখ একর, পানির লেভেল নিচে নেমে যাওয়ার কারণে ৩০ লাখ একর এবং লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ার কারণে ৬৪ লাখ একর জমি আবাদ অযোগ্য হয়ে পড়ে। এর চেয়ে বড় ক্ষতি আর কী হতে পারে? তারা বলছে এ সফর শতভাগ সফল হয়েছে। সফলতার সংজ্ঞা একেকজনের কাছে একেক রকম। সফলতা যদি হয়, যে দেশের আশির্বাদ নিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন করে ঋণ শোধ দেয়া, তাহলে সফর শতভাগ সফল বলা যায়। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী পুরস্কার পেয়েছেন। এটা একটা অর্জন। এটা অর্জন হলে দেশের স্বার্থ ১৬ আনা বিসর্জন দিতে হয়েছে। এ সফরের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ভারতের জন্য সবগুলো জানালা খুলে দিয়েছেন। ভারতীয় বিশেষজ্ঞরাও বলেছেন, সম্পাদিত চুক্তির মাধ্যমে উপমহাদেশের ৪৭ পূর্ব অবস্থায় যাওয়ার রাস্তা তৈরি হয়েছে। এ কথার মাধ্যমে যে ম্যাসেজ এসেছে, এতে আমাদের অর্জন হয়েছে না কি, বিসর্জন তা বুঝতে বেশি জ্ঞানের প্রয়োজন হবে না।
২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। অথচ আমাদের দেশের যে সকল বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট রয়েছে, সেগুলো সচল হলে এর কয়েকগুন বেশি বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। কিন্তু এ বিদ্যুৎ পাওয়ার জন্য ভারতকে আমাদের জাতীয় গ্রিডে প্রবেশের সুযোগ দেয়া হয়েছে। তাদের ঢুকার সুযোগ হলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা ভূলুন্ঠিত হওয়ার আশংকা রয়েছে। ১০০ কোটি ডলার ঋণ দেয়ার কথা ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে। অথচ সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ হাজার হাজার ডলার ঋণ নয়, অনুদান দিলেও তার কোন প্রচার নেই। এ টাকা ব্যয় হবে রেলের কোচ কেনা ও ব্রডগেজ লাইন তৈরির জন্য। ভারত রেল ট্রানজিট চাচ্ছে। তাদের টাকা দিয়ে তাদের ব্যবহার উপযোগী করা হবে রেলপথ আর পরে তা বাংলাদেশকেই সুদসহ ফেরত দিতে হবে। এটা পাওয়া, না দেয়া?

No comments:
Post a Comment