Set as Homepage

Pages

Thursday, January 14, 2010

শুভ জন্মদিন স্যার
লিখেছেন : নিঝুম মজুমদার ১২ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার), ২০০৯ ১১:১০ অপরাহ্ন
এক.
যাকে নিয়ে লিখছি, তার কথা শুনলে আজকাল অনেকেই নাক-মুখ কুঁচকে তাকান , কেউ মুচকি হাসেন যা সেকেন্ড কয়েক পরেই তাচ্ছিল্যের একটি হাসি হিসেবেই ধরা পড়ে যায়, কেউবা বিবাহিত স্ত্রী’র ছোট ভাইটির সমান মর্যাদা দিয়ে দেন নিমিষেই, কেউবা তাঁর চারটি পা , একটি লেজ, দুইটি শিং , এবং লম্বা কান না থাকা সত্বেও কি করে যেন নিরীহ প্রাণী ছাগল কিংবা গরুর সাথে তুলনা করে ফেলেন , কেউ বলেন মূর্খ, কেউ বলেন ব্যাবসায়ী , কেউ বলেন ভন্ড । অতি উতসাহী কয়েকটি সম্প্রদায় আজকাল তাঁর নামকরন করেছেন রাজনীতিবিদ হিসেবে , চ্যাংড়া কিছু ডিজুস ছেলে-পেলেরা তাঁকে ডাকেন মাগীবাজ হিসেবে ।
তার নাম বলবার আগে আরেকটু প্যাঁচাই … গত সপ্তাহে মা’র সাথে যখন কথা বলছিলাম , মা কথার এক পর্যায়ে আমাকে জানান দেন যে, ঢাকায় আমার ফেলে যাওয়া বই গুলো তিনি এখন পড়ছেন । আমার ঘরের সব বই পড়বার মানে হচ্ছে একজন লেখকের বই-ই পড়া । আমার কাছে আর কারো বই নেই । থাকেও না । কি কারনে যেন আমি আর কারো বই পড়তে পারি না । কেন জানি হজম হয় না । আমি মা’র কথা শুনে হাসি । যে মা একসময় শুধু জহির রায়হান পড়তেন, কাজী আনোয়ার হোসেন পড়তেন , শরতচন্দ্র পড়তেন, আমার সে মা ই সংসারের নুন, হলুদ, মরিচ আর খরচ-পাতির হিসেব কষতে কষতেই অনেকটা বছর রান্না ঘরেই আটকা পড়ে যান । অনেক বছর ধরে আটকে থাকা আমার মা মুক্তি পেয়েছেন মনে হয় । মুক্তির আনন্দে তিনি এখন বই পড়েন । এটাই মনে হয় নিয়ম । আজকাল ওই খারাপ লোকটার বই-ই আমার মা পড়েন ।এবার যখন দেশে গেলাম , দেখি, আমার ছোট বোনের রুমে ওই লোকটার অনেক গুলো বই । শুধু বই-ই না , কথা বার্তাতেও অন্য আভাষ । আমাকে বলে , “ভাইয়া, তোমার লেখা যাই হোক না কেন , আমি কিন্তু, তোমার লেখার একজন ভক্ত । বলতে পারো মহা ভক্ত । অটোগ্রাফ প্লিজ ।” এই বলে কাগজ কলম বাড়িয়ে দেয় । কথাতে ব্যাপক রসিকতার আভাষ পাই । বুঝি, ওই খারাপ লোকটার বই খুব পড়া হচ্ছে । ছোট ভাই নিলিম তো আরো এককাঠি সরেস । একবার চুল কেটে বাসায় ফিরেছি । নিলিম কে জিজ্ঞেশ করলাম, “কি রে… কেমন লাগে ? ভালো না ?” । নিলিম গম্ভীর গলায় উত্তর দেয় , “ভালোই, এখন কলা টলা খান । আরো ভালো লাগবে । ” তখন অবশ্য এই কথার মানে বুঝি নাই । অনেকদিন পর যখন খারাপ লোকটার একটা বই হাতে নেই । ঠিক তখনই বুঝি, অনেক আগে ছোটভাইয়ের কথা গুলো এই বই থেকেই নেয়া । আমাকে অতি ভদ্র ভাষায় বাঁদর ডাকা হয়েছে । আমার আর ছোট ভাইয়ের পাশা পাশি রুম হবার কারনে , সারা রাত খিক খিক হাসির আওয়াজ পেতাম । অতি উতসাহী আমার ভাই, হেসেই ক্ষান্ত হতো না । কি পড়ে তার এই তুমুল হাসি , তাও নিয়ে আসত আমাকে দেখাতে । আবারো সেই একই লোক । সেই খারাপ লোকটা ।
আমার বড় দু’বোন তো এই লোকের বই তখন শেষ করেছেন যখন আমরা দু’ভাই ললিপপ খাই । এখন হয়ত তাদের বাচ্চারা পড়বে । আর আমার বাবা তো এই লোকের উপন্যাস থেকে উঠে আসা চরিত্র । তিনি নিজের অজান্তেই কেমন করে এমন চরিত্র হলেন তা বলা বেশ দুষ্কর । আমার আজীবনের বন্ধু, তানিম একবার একটা কথা বলেছিলো , “ তোদের বাসায় কি কোন স্বাভাবিক চরিত্রের মানুষ নাই ??”
ওহ্… আমার কথা তো বলাই হলো না । তেমন কিছু নেই-ও অবশ্য । আমি কেবল তাঁর “ময়ূরাক্ষী” পড়ে মজিদ হই, “অপেক্ষা” পড়ে ইমন হয়ে যাই , “মেঘ বলেছে যাব যাব” পড়ে হাসানের দুঃখে অনেক রাত ভাত খাই না ,তিতলীকে ভয়ানক রকম ঘৃণা করি । “দিনের শেষে পড়ে” জহিরের জন্য কষ্ট পাই, “আকাশ জোড়া মেঘ” পড়ে নিজেকে অন্তত একটি রাতের জন্য ফিরোজ ভেবে সুখে থাকি… রাত বিরেতে হলুদ পাঞ্জাবী পড়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ি… এই করেই আমি আমার নিজের সত্ত্বা হারাই… আর এভাবে চলতেই থাকে …নিরন্তর ।
দুই.
তিনি তাঁর মেঝ মেয়ের খুব ভালো একজন বন্ধুকে বিয়ে করেছেন । চারিদিকে ছি ছি রব উঠে । লোকে বলে, জাত গেলো… জাত গেলো…। কিছুদিন আগে তিনি একটি পত্রিকায় সাক্ষাতকার দিয়েছেন । বলেছেন এমন সব কথা, যা অনেকের পছন্দ হয়নি । লোকটির উপর ক্ষোভের আস্তরন পড়েছে, ব্যাথায় অনেকেই কুঁকড়ে গেছেন । মুখ ফিরিয়ে নিয়ে গেছেন , যদিও আগে থেকে মুখ ফেরানোই ছিলো…
তিন.
খন কিছু লিখতে বসি, স্পষ্ট বুঝি, এই লোক কলমে চেপে বসেছে । তাড়াই না । মাথা থেকে বেরও করি না । থাক না । এত লেখক , এত মানুষের ভীড়ে আরেকটি মানুষ না হয় তাঁরই সত্ত্বা হলো । নিজের বলে কিছুই না রাখল… এত অপছন্দের ভীড়ে আমি না হয় তাঁকে ভালই বাসলাম ।
চার.
লোকটির নাম হূমায়ুন আহমেদ । আজ তাঁর একষট্টি বছর পূর্ণ হলো । আজ নভেম্বর ১৩, ২০০৯।

শুভ জন্মদিন স্যার… আপনার জন্য অনেক অনেক ভালোবাসা । আপনি ভালো থাকুন । বেঁচে থাকুন । নিরন্তর…

3 comments:

  1. asholei tai....amader usit unar personal life nie ghatagati na kora...

    ReplyDelete
  2. @ all......bhai ami kintu humayun ahmed ke like korina...karon she hosse ekjon lofar,luissa,,,si si apnara kemen tar gun gan kortesen amar mathai ashe na...

    ReplyDelete